Admission
জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র - মানুষের আচরণ পরিবর্তনে হরমোনের প্রভাব

আচরণ পরিবর্তনে হরমোনের প্রভাব

মানবদেহের যে কোনো আচরণের রহস্য উদ্ঘাটনে বিস্মিত হতে হয় কতো নিখুঁত, সঠিক ও পরিমিত হরমোনের মিশ্রণে দেহ পরিচালিত হচ্ছে। এর জন্যে রয়েছে কতকগুলো সুনির্দিষ্ট অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। জীবনের প্রত্যেক ধাপে বিভিন্ন উপায়ে নারী, পুরুষ ও শিশুদেহের দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তনে হরমোনের প্রভাব রয়েছে।

নারীদের আচরণগত পরিবর্তনঃ

১. রজঃচক্র চলাকালীন সময় নারীর দেহের কিছু কিছু হরমোন ক্ষরণে তারতম্যের সৃষ্টি হয়। এর ফলে নারীদের মধ্যে পুরুষের সামনে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরার প্রবণতা বেড়ে যায়, খাদ্য গ্রহণ কমে যায় ইত্যাদি। সাধারণত নারীর দেহে ডিম্বপাতের সময় এগিয়ে আসলে এই ধরনের আচরণ করে থাকে।

২. রজঃচক্র বন্ধকালীন সময় এগিয়ে আসলে ডিম্বাশয়ে প্রোজেস্টেরণ, এস্ট্রোজেন ও অ্যান্ড্রোজেন হরমোন কম মাত্রায় ক্ষরিত হয় । এই পরিবর্তনের ফলে দেখা যায় নারীরা অল্প কিছুতে রেগে যায়, তাদের ঘুম ঠিকমতো হয়। না, অনেকে আবার বিষণ্নতায় ভুগে থাকে।

৩. গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের হরমোন যেমন- HCG (Human Chorionic Gonadotropin), প্রোজেস্টেরণ, রিলাক্সিন ইত্যাদি হরমোন ক্ষরণে তারতম্যের সৃষ্টি হয়। এর ফলে দেখা যায় অনেকে অল্পতে রেগে উঠে, হঠাৎ করে কেঁদে ফেলে ইত্যাদি নানান পরিবর্তন দেখা যায়।

৪. অনেক সময় দেখা যায় সন্তান প্রসবের পর হরমোন ক্ষরণের তারতম্যের জন্য নারীরা নানান মানসিক রোগে ভুগেন। একে প্রসবোত্তর সাইকোসিস বলে।

পুরুষদের আচরণগত পরিবর্তন

১. অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরণ হরমোন ক্ষরণের স্বভাবে হিংস্রতা সৃষ্টি হয় এবং শক্তি সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়। 

২. টেস্টোস্টেরণের পরিমাণ কমে গেলে বিষণ্নতায় ডুবে যায়। 

৩. শুক্র নিবৃত্তি বা অ্যান্ড্রোপজ এর সময় কাছে চলে আসলে যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যায়।

৪.টেস্টোস্টেরণের পরিমাণ বেড়ে গেলে যৌন আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়।

অনিয়ন্ত্রিত হরমোন ব্যবহারের ফলাফল ( Result of uncontrolled use of Hormone ) দেহ সচল, কর্মক্ষম রাখতে অতি অল্প ও নির্দিষ্ট পরিমাণ হরমোন দেহে প্রয়োজন হয়। কারও দেহে পরিমিত হরমোন। না হলে নানা জটিল অবস্থা দেখা দিয়ে জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলতে পারে। এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প ও দক্ষ ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট হরমোন ব্যবহার করতে হয়। হরমোনের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কষ্টদায়ক জীবনের অবসান।। গালেও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারটি উল্টো ফল বয়ে আনে। নিচে কয়েকটি প্রধান হরমোনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলাফল করা হলো।

১. বৃদ্ধি হরমোন : দেহকে স্থিতিশীল ও বৃদ্ধিসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে অতিরিক্ত বৃদ্ধি হরমোন ব্যবহারের ফলে উচ্চ রিতাপ, রক্তে প্রচুর ফ্যাট, ডায়াবেটিস, সন্ধিব্যথা, হৃৎপিন্ড বড় হয়ে যাওয়ায় হার্ট ফেইলিউর এবং হাত, পা, মাথার হাড় সাভাবিক বড় হয়ে যাওয়া।

২. থাইরক্সিন : থাইরক্সিনের স্বল্পতা পূরণে যে সংশ্লেষিত হরমোন (Levothyroxine) ব্যবহার করা হয় তাতে বল থাইরয়েড হরমোন স্বল্পতাই পূরণ হয় না, সে সঙ্গে থাইরয়েড ক্যান্সার এবং গলগণ্ড প্রতিরোধেও সহায়ক হয়। কিন্তু অতিমাত্রায় ব্যবহার হলে যে সব জটিলতা দেখা দেয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : ছদ্ম-গলগন্ড হতে পারে; ছাড়া দ্রুত হৃৎস্পন্দন, উদরীয় ব্যথা, চিন্তাগ্রস্ততা, খিটখিটে মেজাজ, ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধাবৃদ্ধি প্রভৃতি। অ্যালার্জিক ডিক্রিয়ায় শ্বাসকষ্ট, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া এবং মুখমন্ডল ও জিহ্বা ফুলে যায়। হার্ট ফেইলিউর এবং রক্তে ক্যালসিয়াম ও লফরাস মাত্রার অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে।

৩. এপিনেফ্রিন (অ্যাড্রেনালিন) : ফুসফুসের ভেতরে বাতাস চলাচলের নালি খুলতে, রক্তবাহিকা সংকীর্ণ করতে এবং বিভিন্ন মারাত্মক অ্যালার্জিক ক্রিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করতে সংশ্লেষিত এপিনেফ্রিন ব্যবহৃত হয়। অতিমাত্রায় ব্যবহৃত হলে দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপ, সঙ্গে মাথাব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টি, দুঃশ্চিন্তা, দ্বিধাদ্বন্ধ, বুকব্যথা, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, হঠাৎ তা, কথাবলা বা হাঁটাচলায় ভারসাম্যহীনতা, ঘনঘন শ্বাস নেওয়া প্রভৃতি।

৪. টেস্টোস্টেরণ : এটি পুরুষের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হরমোন। এর স্বাভাবিক ক্ষরণে পুরুষ যৌনাঙ্গ সুগঠিত রাখে, চাঁখ যৌন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটিয়ে পৌরুষ প্রদর্শন করে। বড়ি বা ইনজেকশনের মাধ্যমে টেস্টোস্টেরণের অভাব পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু এর অতিব্যবহারে প্রথমে দুর্বলতা, নিদ্রালুভাব, গায়ে ব্যথা, চামড়ায় জ্বালাপোড়া ভাব, মনোযোগহীনতা, হাত-পায়ের আঙ্গুল ঠান্ডা হয়ে আসা প্রভৃতি দেখা দেয়। পরে শুক্রাশয়ে ব্যথা, দ্রুত বা মন্থর হৃৎস্পন্দন, তিময় মলত্যাগ, মূত্রথলিতে ব্যথা, পিঠের দুপাশে বা মাঝখান ধরে ব্যথা, ডায়ারিয়া প্রভৃতি জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয় বা কোনো কারণে দেহে অপর্যাপ্ত হরমোন উৎপন্ন হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এস্ট্রোজেনবাহী বড়ি বা ইঞ্জেকশন দেন।

 ৫. এস্ট্রোজেন : এস্ট্রোজেন নারীদেহের গুরুত্বপূর্ণ হরমোন। পরিমিত এস্ট্রোজেন নারীদেহকে সুস্থ, সবল ও সুদর্শন ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এসব সামগ্রীর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে নারী বিভিন্ন জটিলতায় ভুগে, যেমন- স্তন দৃঢ় হয়ে যাওয়া, লিভার অতিরিক্ত রক্তস্রাব, মাথাব্যথা, মানসিক ভাবের পরিবর্তন, বমিভাব, ত্বকে ফুসকুড়ি, মূত্রের রং পরিবর্তন

৬. ইনসুলিন : আজকাল অনেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনস্যুলিন নিয়ে জীবনযাত্রা অবসাদ, ঢুলুঢুলুভাব, মাথাব্যথা, ক্ষুধা, মনোযোগে ব্যর্থ হওয়া, বমিভাব, স্নায়ুদৌর্বল্য, ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন, দ্রুত হৃৎস্পন্দন, রেখেছেন। কিন্তু এর ব্যবহার কঠোর নিয়ন্ত্রণে না থাকলে নতুন নতুন জটিলতায় ভোগার সম্ভাবনা থাকে, যেমন ব্যঘাত বিচনি, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

Content added By